জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়

দেশজুড়ে উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হলো বাঙালির চিরগৌরবের বিজয়ের দিন। এদিন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। দিনটি উপলক্ষে এর আগে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা যে বাণী দিয়েছেন, তাতে ছিল দেশকে গড়ে তোলার জন্য সবার প্রতি জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার আহ্বান। দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এ আহ্বান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও সময়োচিত।

রাষ্ট্রপতির বাণীতে বলা হয়, ‘দিনটি আমাদের জাতীয় গৌরবের প্রতীক, স্বাধীনতার চূড়ান্ত সাফল্যের স্মারক। স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হলে গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরমতসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং ঐক্যের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।’

প্রধান উপদেষ্টার বাণীতে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার দীর্ঘ সংগ্রামে জীবন উৎসর্গকারী বীর শহীদদের প্রতি জানাই আমার গভীর শ্রদ্ধা। তাদের সর্বোচ্চ ত্যাগ আমাদের অন্যায় ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানোর শক্তি জোগায় এবং প্রতিটি সংকট ও সংগ্রামে মুক্তির পথে আমাদের পথনির্দেশ করে। এ বিজয় দিবস হোক জাতীয় ঐক্যের নতুন আহ্বান। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়ে যে গণতান্ত্রিক রূপান্তর শুরু হয়েছে, তার মাধ্যমে জনগণের প্রকৃত ক্ষমতায়ন রক্ষায় যে কোনো মূল্যে আমরা আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করি। ১৯৭১ সালের বিজয়ের মধ্য দিয়ে উদিত স্বাধীনতার প্রভাত পরবর্তীকালে বহুবার কর্তৃত্ববাদ ও কুশাসনের অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা আবারও বৈষম্য, দুর্নীতি ও স্বৈরাচারমুক্ত একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সুযোগ পেয়েছি। আরও বলা হয়, একটি সুশাসিত ও প্রগতিশীল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যে ব্যাপক সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তা এখন জনগণের সম্মিলিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে সফল পরিণতির দিকে এগোচ্ছে। এসব উদ্যোগের ফলে কর্তৃত্ববাদ নির্মূল হবে এবং রাষ্ট্রের সবক্ষেত্রে জনগণকেন্দ্রিক ও টেকসই উন্নয়নের পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। আহ্বান জানানো হয়েছে নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী ও সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার।

জাতির শ্রেষ্ঠ গৌরবের দিনটি উদযাপনের বেলায়ও গতকাল দেখা যায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। যুদ্ধ জয়ের অপার আনন্দ, গৌরব ও অগণিত বীর সন্তানের আত্মদানের বেদনা নিয়ে উদযাপনের মধ্য দিয়ে পালিত হয় বিজয়ের ৫৫তম দিবস।

গভীর দুঃখের বিষয়, জাতি হিসেবে এত বড় ত্যাগের পরও আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণ করতে পারিনি। ব্যর্থ হয়েছি একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলতে, সামাজিক-অর্থনৈতিক বৈষম্যকে প্রত্যাশিত মাত্রায় দূর করতে। অথচ অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় দেশটাকে অন্য কোনো দেশ নয়, আমরাই পরিচালনা করেছি। দুর্নীতি, দুঃশাসন, অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে দেশেরই শাসকগোষ্ঠীর হাত ধরে। দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনমানুষের জেগে ওঠা ও ত্যাগের ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে ২৪-এর জুলাই। এবারও স্বপ্ন জাগে সবার জন্য রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। এবার কি সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে? দেশ আজ একটি যুগসন্ধিকাল অতিক্রম করছে। উদ্ভূত রাজনৈতিক বাস্তবতায় এসেছে গৌরবের বিজয়ের দিন। অতীতে সবাই মিলে বারবার দুঃশাসকের টুঁটি চেপে ধরেছে, করেছে বিতাড়িত; মহান বিজয়ের দিনে রাষ্ট্রের দুই প্রধান কর্তার আহ্বানও একই—ঐক্যের। দেশকে গড়ে তুলতে হলে সবার মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি। সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে সব ষড়যন্ত্র ও প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে। আমাদের প্রত্যাশা, শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে হাতে হাত রেখে চলবে সবাই।

Some more such news

EN